ডেইলি প্রেস ডেস্ক: জুলাই অভ্যুত্থান দমনকে কেন্দ্র করে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। রবিবার (৪ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রাষ্ট্রপক্ষের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এই বিচারিক প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করছেন প্রসিকিউশন টিমের প্রধান কৌঁসুলি ফারুক আহাম্মদ। এই গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে, যা বিচার কার্যক্রমে জনসম্পৃক্ততা ও স্বচ্ছতার প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রাষ্ট্রপক্ষ জানিয়েছে, আজকের শুনানিতে প্রথম সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত থাকছেন খোকন চন্দ্র বর্মণ। মামলায় মোট ৮১ জন সাক্ষী রয়েছেন, যাদের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা এবং একটি জাতীয় দৈনিকের একজন সম্পাদকও রয়েছেন।
আসামিদের মধ্যে একমাত্র চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন কারাগারে আটক থাকলেও শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল বর্তমানে পলাতক। মামুন ইতোমধ্যে দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেছেন। মামলার রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে এবং আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ মামুনের পক্ষে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই মামলার মূল অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনে পরিকল্পিতভাবে ১,৪০০ জন নাগরিককে হত্যা, গুম ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজে’র মতো আন্তর্জাতিক অপরাধের উপাদান রয়েছে।
গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে এবং বিচার শুরুর নির্দেশ দেয়। ওইদিন আদালত প্রারম্ভিক বক্তব্যের জন্য ৩ আগস্ট এবং সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৪ আগস্ট তারিখ নির্ধারণ করেছিল।
এই বিচার কার্যক্রম রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আগ্রহের জন্ম দিয়েছে। কারণ, এটি সেই আদালত যেখানে শেখ হাসিনার সরকার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। এবার সেই আদালতেই শেখ হাসিনার নিজের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হলো।
এনসিপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শেখ হাসিনার দ্রুত বিচার দাবি করে আসছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আসিফ নজরুল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আশা প্রকাশ করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই এ বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে—এই বিচার কত দ্রুত এগোবে এবং এর রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব কতটা গভীর হবে? বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী অধ্যায়।