ডেইলি প্রেস ডেস্ক: জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজন করা হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বৃহৎ সমাবেশ। দলটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে আয়োজিত এ সমাবেশে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে ভোর থেকেই ঢাকায় সমবেত হতে শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা।
রোববার (৩ আগস্ট) বিকেল ৪টায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই শহীদ মিনার এলাকায় জড়ো হতে থাকেন হাজারো কর্মী-সমর্থক। সবার মুখেই উচ্ছ্বাস, প্রত্যাশা ও দৃঢ় প্রত্যয়—‘নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিতে এসেছি’।
টেকনাফ থেকে আসা আল-আমিন রহমান বলেন, “১ দফার ঘোষক নাহিদ ভাইয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে এসেছি। কক্সবাজারে এসেছিলেন, কিন্তু তখন ভালোভাবে দেখা হয়নি। আজ তাকে একনজর দেখতে এসেছি। আমরা বিশ্বাস করি, নাহিদ ভাইয়ের নেতৃত্বে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন ঘটেছে, এনসিপির হাত ধরে আসবে নতুন বাংলাদেশ।”
তিনি আরও বলেন, “এনসিপিকে আমার ভালো লাগে, কারণ এখানে চাঁদাবাজি, গুম-খুন হবে না। এটা একটা সৎ রাজনীতির প্ল্যাটফর্ম। দেশের জন্য এই দল কাজ করবে, আমরা তাই পাশে আছি।”
সমাবেশ ঘিরে শহীদ মিনারে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা গেছে। লাল-সবুজ ব্যানার, পোস্টার, প্ল্যাকার্ডে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। মঞ্চ তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়ও রয়েছে বাড়তি সতর্কতা।
আজকের সমাবেশের মধ্য দিয়েই শেষ হবে এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’। গত এক মাসে দলটি দেশের প্রান্তিক অঞ্চল থেকে শুরু করে শহর—সবখানে পৌঁছেছে। রোদে-পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, দিনরাত হাঁটেছেন নেতাকর্মীরা। কখনো টেকনাফ, কখনো তেঁতুলিয়া—পথে পথে ছুটে এনসিপি নিজেদের তুলে ধরেছে মানুষের দরজায়।
দলটির নেতারা বলছেন, এই পদযাত্রা তাদেরকে বিপুল জনসমর্থন এনে দিয়েছে। শুধু সমর্থন নয়, জনগণের প্রত্যাশাও তারা শুনেছেন, বুঝেছেন। সেই প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে আজকের ইশতেহারে।
এনসিপির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া বলেন, “জুলাই পদযাত্রা ছিল আমাদের আত্মপ্রকাশের পরীক্ষামূলক ধাপ। আমরা প্রত্যেকটি অঞ্চলে মানুষের সরাসরি মতামত সংগ্রহ করেছি। আজকের ইশতেহারে থাকবে তাদের কণ্ঠস্বর, তাদের আকাঙ্ক্ষা, তাদের ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি।”
উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারিতে আত্মপ্রকাশের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় এনসিপি তৃণমূল রাজনীতিতে নিজেদের বিস্তৃত করতে ‘জুলাই পদযাত্রা’ চালু করে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জে সহিংসতা, কক্সবাজারে রাজনৈতিক উত্তেজনাসহ বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে তারা আলোচনায় উঠে আসে।
আজকের সমাবেশ শুধু ইশতেহার ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। পাশাপাশি ‘জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ’ বাস্তবায়নের দাবিতে পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখাও তুলে ধরবে এনসিপি।
দেশজুড়ে নজর কাড়তে সক্ষম এই সমাবেশে ‘ঐতিহাসিক দিন’ হিসেবে ৩ আগস্টকে চিহ্নিত করছে এনসিপি। তাদের প্রত্যাশা, এখান থেকেই সূচনা হবে ‘নতুন বাংলাদেশের’।